ঘোষণা ছিল সস, মটরশুঁটি ও চকলেট আমদানির কিন্তু কন্টেইনার খুলে পাওয়া গেল এনার্জি ড্রিংকস ও চুইংগাম। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বের করে নেওয়ার জন্য কাস্টমসে শুল্কও পরিশোধ করেছিল আমদানিকারক ও তার নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ। কিন্তু এর আগেই ধরা পড়ল কাস্টমস গোয়েন্দা দল এআইআরের হাতে। সোমবার চালানটির কন্টেইনার খুলে নিশ্চিত হয় কাস্টমস। এতে অন্তত এক কোটি ৩৪ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়েছিল। গোয়েন্দা দলের তৎপরতায় সেটা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
জানতে চাইলে কাস্টমস কাস্টমস গোয়েন্দা দল এআইআর শাখার প্রধান সহকারী কমিশনার নূর এ হাসনা সানজিদা অনসূয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর থেকেই আমরা চালানটি লক করে রাখি। যাতে আমাদের উপস্থিতিতে কায়িক পরীক্ষা ছাড়া চালানটি খালাস না হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চালানটি খালাস নিচ্ছিল না আমদানিকাকরক। এতে আমাদের সন্দেহ আরো বাড়ে।
আমাদের মনে হয়েছে আমদানিকারক-সিঅ্যান্ডএফ সুযোগ বুঝে কোনো এক কৌশলে চালানটি বের করার। এজন্য ৫ মাস অপেক্ষার পর নিয়মানুযায়ী আমরা কন্টেইনারটি ফোর্স কিপডাউন বা বাধ্যতামূলকভাবে কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করি। এবং আমাদের ধারণাই সঠিক হয়। শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করি; এতে শুধু এক কোটি ৩৪ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়ে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের জেবুন্নেসা রোডের ৬০৪/৬০৯ কর্ণফুলী টাওয়ারে অবস্থিত জিয়াদ ইন্টারন্যাশনালের নামে চালানটি আমদানি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের ৯৩৬ আহমেদ ম্যানশনের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইস্টার্ন এন্টারপ্রাইজ চলতি ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কাস্টম হাউসে চালানটি খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি (নম্বর সি-৩২১৮০৩) দাখিল করেন।
এরপর আমদানিকারক একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চালানটি বন্দর থেকে বের করার বিভিন্ন কৌশল খুঁজতে থাকে। কিন্তু কাস্টমস গোয়েন্দা দলের উপস্থিতিতে কায়িক পরীক্ষা করে ছাড় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় আমদানিকারক-সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কৌশল কাজে লাগছিল না। চালানটি খালাসের জন্য তারা নেতাদের মাধ্যমে তদবির করেন। এরপর আর এক মুহূর্ত সময়ক্ষেপন না করে সোমবার দুপুরেই কন্টেইনারটি খুলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আমদানিকারক ঘোষণা অনুযায়ী, চীন থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ট্রেডার্স জাহাজে আসা চালানটির ঘোষিত মূল্য ছিল মাত্র ১২ হাজার মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ব্যাংক এশিয়া থেকে চালানটির ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে চালানটি খালাসের উদ্দেশ্য ছিল আমদানিকারকের। সোমবার আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য মিলাতে গিয়ে অনিয়ম এবং মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়ে। শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় আমদানিকারকের ৪ হাজার ৯৫৬ কেজি সস ঘোষণার বিপরীতে পাওয়া যায় ৫ হাজার ৭৯ কেজি। ১৩ হাজার ৭৯০ কেজি মটরশুঁটি ঘোষণার বিপরীতে পাওয়া যায় মাত্র ২৪০ কেজি এবং ১ হাজার ২৯৬ কেজি চকলেট ঘোষণার বিপরীতে পাওয়া যায় আটগুণ বেশি চকলেট ৮ হাজার ৬০৪ কেজি।
এছাড়া, ঘোষণা ছাড়া অর্গানিক মিক্সড নাটস ১ হাজার ৮৬০ কেজি, চুইংগাম ১৬ হাজার ২৫২ কেজি, নুডুলস ৩৯২ কেজি এবং উচ্চ শুল্কের এনার্জি ড্রিংকস ১০ হাজার ৬৪৮ লিটার পাওয়া যায়। একটি চালানেই আমদানিকারক ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনায় কাস্টম আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চেয়ে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নোমান চৌধুরীকে ফোন করা হলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসের ল্যান্ড ফোনে ফোন করলেও সাড়া মিলেনি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।